পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ একরামুল হক মুন্না॥
ছাতার ব্যবহার এক দিনেই হয়ে উঠেনি। মানব সৃষ্টির শুরুর দিকে মানুষ কচু শাকের পাতা আর কলা গাছের পাতা দিয়ে ছাতার কাজ চালাতো। বৃষ্টি আর প্রচন্ড রোদ হলেই প্রয়োজন হয় ছাতার। ঝমঝম আর টিপটিপ বৃষ্টি যেটাই বলেন, বৃষ্টিতে ছাতার কোনো জুড়ি নাই। একসময় দেখা যেতো গ্রামে গ্রামে ফেরী করে ছাতা মেরামত করতে আসতো কারিগররা। আর মুহূর্তেই অস্থায়ী এই দোকান গুলোতে থাকতো উপচে পড়া ভিড়। এই পেশাতে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু সভ্যতার বিকাশের মাধ্যমে আজ আর চোখেই পরে না ছাতা মেরামত কারিগরদের। যেন পেশাটি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার ৯নং মাগুড়া ইউনিয়নের ঝলই বাজারে ছাতা মেরামত করছিলে মোঃ দবিরুল ইসলাম (৫৫) । তিনি বিভিন্ন বাজারে ও এলাকা ঘুরে ছাতা মেরামত করেন। হরেক রকমের ভাঙ্গা ছাতা মেরামত করেন তিনি। আর কাজ বুঝে বেশ দামও নিচ্ছেন।
ঝলই বাজারে ছাতা মেরামত করতে আসা ইরফান বলেন, আমার বয়সচ ৪২ বছর। ছোটবেলায় দেখতাম মোড়ে মোড়ে ছাতা মেরামতের মিস্ত্রি পাওয়া যেতো। কিন্ত এখন আর ছাতা মিস্ত্রিদের চোখেই পড়ে না। তাছাড়া, ছাতা মেরামত করতে যে টাকা লাগে, তার সাথে কিছু টাকা দিয়ে নতুন ছাতা কেনা যায়।
ছাতা মেরামতের কারিগর মোঃ দবিরুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়ি সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়ন এর বানপাড়া গ্রামে। আমার এই পেশায় ৪৩ বছর চলছে , আমার বাবা মৃতঃ টেপরা মোহাম্মদ প্রায় ৫২ বছর, এবং দাদা মৃতঃ দিয়ানত মোহাম্মদ প্রায় ৫৪ বছর ছাতা মেরামত পেশা ছিলেন। আমার ছেলে বর্তমান ১৩ বছর চলছে এই পেশায়। আমার বাপ দাদার রেখে যাওয়া পেশা ও পরিবারের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা জন্য এই পেশা চালিয়ে যাচ্ছি। তাই নেশা হিসাবে এখনো বর্ষা মৌসুমে বের হই। বর্ষা মৌসুমে আমাদের কাজের হিড়িক পরে যেতো আগে। আর এক মৌসুমে কাজ করেই চলতাম সারাবছর। কিন্ত আজকাল মানুষের রুচি বিদেশীদের মতো হয়ে গেছে।ছাতার কোনো অংশ নষ্ট বা ছিঁড়ে গেলে এখন আর মেরামত করতে চান না। তবে, এখনো হাল ছাড়ি নি ভাই, ২মাস পাড়ায় পাড়ায় ও বাজারে ঘুরে ছাতা মেরামত করি। আর বাকি সময় এলাকায় কৃষি শ্রমিক এর কাজ করি। আমি এক স্ত্রী, দুই কন্যা, এক পুত্র নিয়ে বর্তমান অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।
এবিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলার ৯নং মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ প্রধান বাবলু জানান , আগে মানুষ এতটা সৌখিন ছিল না। একটা ছাতা দিয়ে যুগ পার করে ফেলত। আর এখন মানুষ একটা ছাতা বেশী দিন ব্যবহার করে না। একটু থেকে একটু সমস্যা হলেই নতুন ছাতা কিনে নেয়।যেখানে আগে মোরে মোরে ছাতা মেরামত করার কারিগর পাওয়া যেত, সেখানে এখন ৪ থেকে ৫ টা বাজার বা এলাকা ঘুরলে একজন ছাতা মেরামত করার কারিগর পাওয়া যায়না । অনেকে রেইনকোট ব্যবহার করছেন। তাই দিন যত যাচ্ছে ততই বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে এই পেশা।