দিনাজপুর প্রতিনিধি : ২ বছর পর এশিয়ার বৃহত্তম ঈদের জামাত দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে আয়োজনের ব্যাপারে সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারকরনে পুলিশ, র্যা ব , বিজিবি ও আনসার সদস্যগণ দায়িত্ব পালন করবেন। ইতিমধ্যে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণসহ ঈদগাহের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও সংস্কার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে ২০১৭ সালে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫২ গম্বুজের বিশাল ঈদগাহ মিনারে করোনার কারনে ২০২০ ও ২০২১ সালে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাজে জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। দীর্ঘ ২ বছর পর প্রায় ২২ একর আয়তনের এই বিশাল ঈদগাহে এবার ৬ লক্ষাধিক মুসুল্লীর সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী নীলফামারী ও জয়পুরহাট জেলার লাখ লাখ মুসুল্লী আগামী ঈদুল ফিতরের জামাতে শরিক হবেন বলে আয়োজকদের আশা। শোলাকিয়া ঐতিহ্যবাহী মাঠ হলেও আয়তনের দিক দিয়ে দিনাজপুর ঈদগাহ মাঠ চার গুন বড়।
শোলাকিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ঈদের জামাতের পাশাপাশি দিনাজপুরের এই ময়দানে প্রতিবার ছয় থেকে সাত লাখ মানুষের সমাগম হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ ইকবালুর রহিম। এবারে ও ৬ লক্ষাধিক লোকের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি সাংবাদিকদের জানান, এবারে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত সকাল ৯টায় শহরের গোর-এ-শহীদ বড়ময়দানে ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। বিশিষ্ট আলেম মাওলানা শামসুল ইসলাম কাসেমী জামাতে ইমামতি করবেন। ৬ লক্ষাধিক মুসুল্লীর বিশাল এই ঈদের জামাত এশিয়ার বৃহত্তম ঈদের জামাত। শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য সার্বিক সমন্বয়ক জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকির নেতৃত্বে ব্যাপক কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। পুলিশ, র্যা ব , বিজিবি ও আনসার সদস্যগণ ঈদগাহের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। ইতিমধ্যে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসুল্লীদের বহনকারী যানবাহন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে বিশাল এই ঈদগাহের দক্ষিণ দিকে। ইতিমধ্যে মিনারের সংস্কারসহ মাঠের যাবতীয় কাজ পুরোদমে চলছে। জেলা পরিষদ সহ বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক সহযোগিতায় সবধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এশিয়ার বৃহত্তম ঈদের জামাত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ঈদগাহ ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সভা হয়েছে। কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হুইপ ইকবালুর রহিম সব বিষয় নজর দিয়ে সুচারুভাবে সবকিছু মনিটরিং করছেন।
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, এবারে এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাত দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে শান্তিপূর্ণ নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে অনুষ্ঠিত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঈদগাহ মাঠে প্রবেশ করতে প্রত্যেক মুসুল্লীকে ৩টি স্তরে চেক করা হবে। কোনো বিড়ম্বনা ছাড়াই মুসুল্লীরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ১৯টি প্রবেশ দ্বার দিয়ে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিং হয়ে জায়নামাজ ও নামাজের প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে প্রবেশ করবে। সাদা পোষাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঈদগাহ জামাতে ভিতরে-বাইরে সহ সর্বস্তরের নিয়োজিত থাকবে। অতিরিক্ত নিরাপত্তা ঈদগাহ মাঠের উপরে ড্রোন চালিয়ে সবমুসুল্লিদেরই তথ্য রেকর্ড করা হবে। সব মিলিয়ে দিনাজপুর জেলা পুলিশ ও র্যা ব সদস্যদের সমন্বয়ে কণ্ট্রোল রুমে সিসি টিভি স্থাপনে ঈদগাহ মাঠের জামাত মনিটরিং ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্নে সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে।
দিনাজপুর সদর ৩ আসনের এমপি ও জাতীয় সংসদের হ্ইুপ ইকবালুর রহিমের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় এবং পরিকল্পনায় দেশের বৃহত্তম দৃষ্টি নন্দন ঈদগাহ মিনার ও ঈদগাহ মাঠ নির্মান করা হয়। ৫২ গম্বজের ঈদগাহে ২ প্রান্তের মিনার ৬০ ফুট এবং মাঝখানের ২টি মিনার ৫০ ফুট উচ্চতা। ইমাম দাড়ানোর স্থান মেহেরাবের গম্বুজের উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সঙ্গে রয়েছে ৪৯টি গম্বুজ। ৫১৬ ফুট দৈর্ঘের ৩২টি আর্চ নির্মান করা হয়েছে। পুরো মিনার সিরামিক ইটে নির্মিত এবং প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে নয়নাভিরাম লাইটিং এর ব্যবস্থা রয়েছে।