২৫ বছর পর সিলেটের খাদিমনগরে চাঞ্চল্যকর আব্দুল মোতালিব হত্যা মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে দুই আসামিকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রমে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো. শাহাদৎ হোসেন প্রামাণিক এ রায় ঘোষণা করেন। ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আহম্মদ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার খাড়াউড়া গ্রামের মৃত সুরুজ আলীর ছেলে বর্তমানে ইসলামপুর ধনুকান্দি চামেলীবাগ আবাসিক এলাকার ১০৫ নম্বর বাসার বাসিন্দা মো. শওকত আলী এবং নগরের টিলাগড় ব্রাহ্মণপাড়ার মৃত আজগর আলীর ছেলে আব্দুর রহিম। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা পলাতক রয়েছেন।
মামলার বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, খাদিমনগর এলাকার ধনুকান্দি গ্রামের মৃত সাইয়িদ উল্ল্যাহর ছেলে আব্দুল মোতালিবের সাথে শওকত আলী ও আব্দুর রহিমের জমিজমা কেনা-বেচা সংক্রান্ত টাকার বিরোধ ছিল। এরই জেরে ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল সকাল ৭টার দিকে শওকত আলী ও আব্দুর রহিম নাস্তা খাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে আব্দুল মোতালিবকে ডেকে নিয়ে যায়। ওইদিন শওকত আলী ও আব্দুর রহিমসহ তার লোকজন আব্দুল মোতালিবকে হত্যা করে আরামবাগ এলাকায় ফেলে যায়। পরে ঘাতক শওকত আলী ও আব্দুর রহিম বিষয়টি নিয়ে টালবাহনা শুরু করেন।
এদিকে আব্দুল মোতালিব বাড়িতে না আসায় পরদিন ২৪ এপ্রিল কোতোয়ালি থানায় ১১১১ নম্বর একটি জিডি করেন তার ভাই মো. তাহির আলী। তৎকালীন কোতোয়ালি থানা পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে আব্দুল মোতালিবের মরদেহ ব্যবহারযোগ্য কাপড়চোপড় দেখালে তার ভাই ও তার পরিবার মরদেহ শনাক্ত করেন। এর আগে পুলিশ আরামবাগ এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে বেওয়ারিস মরদেহ হিসেবে সিলেট নগরীর মানিকপীর টিলায় দাফন করে। পরবর্তীতে সিলেট জেলা প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ এপ্রিল পুলিশ আব্দুল মোতালিবের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে তার পরিবার। আইনি প্রক্রিয়া শেষে আব্দুল মোতালিবের মরদেহ দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় নিহত আব্দুল মোতালিবের ভাই তাহির আলী কোতোয়ালি থানায় শওকত আলী ও আব্দুর রহিমের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০/১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর নং-৭১ (২৬-০৪-১৯৯৮)। দায়রা ৪৩/২০০১। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৪ জুলাই তৎকালীন কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু জাফর দুইজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (নং-৩৮৯) দাখিল করেন। ২০০১ সালের ১৭ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর মামলার বিচার শুরু হয়।
দীর্ঘ শুনানি ও ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিদের প্রত্যেককে পেনাল কোড এর ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া পেনাল কোডের ৩৬৪ ধারায় আরও ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রমে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট মো. ফখরুল ইসলাম এবং আসামি পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. আমিরুল ইসলাম।