চিকিৎসাসেবার মান উন্নত করার লক্ষ্যে চেক-আপ ডায়াগনস্টিক এন্ড স্পেশালইজড হসপিটাল পর্যবেক্ষণ করেছেন নেদারল্যান্ডসের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পাম (Project Sending Out Expert- PUM)-এর প্রতিনিধি স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞ মেইন্ডার্ট জোহানেস পিটার শ্মিট। চেক-আপ ডায়াগনস্টিক এন্ড স্পেশালইজড হসপিটালের আমন্ত্রণে মি. পিটার সপ্তাহব্যাপী হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সকল পর্যায়ের চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সাথে কথা বলেন এবং চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত সব ধরণের যন্ত্রপাতি পর্যবেক্ষণ করেন। সাত দিনব্যাপী পুঙ্খানুপুঙ্খ সব কিছু দেখার পর কীভাবে চেক-আপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধি করা যায়, রোগী-ডাক্তার-নার্সসহ সেবাসংশ্লিষ্ট সবার সাথে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে আধুনিক মানের সেবা নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দেন মি. পিটার।
পাম-নেদারল্যন্ডস বিশ্বব্যাপী এপর্যন্ত ৩৭টি দেশে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ১২শ’ স্বেচ্ছাসেবী-বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, খাদ্য-পানীয় জল, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উন্নয়নে পরামর্শমূলক কাজ করছে। পাম নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত একটি স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। যেসব প্রতিষ্ঠান টেকসই উন্নয়ন ও দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক প্রভাব পড়ে এমন উচ্চাকাঙ্খা নিয়ে কোনো উদ্যোগ শুরু করেছে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে পরামর্শ দিয়ে থাকে পাম।
এরই অংশ হিসেবে বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চেক-আপ স্পেশালাইজড হসপিটাল বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞ মি. পিটারকে আমন্ত্রণ জানায়। কর্মজীবনে তিনি দীর্ঘদিন নেদারল্যান্ডসের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে কাজ করে এখন অবসর জীবনযাপন করছেন। সেইসাথে পাম নেদারল্যান্ডসের স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ্যসেবা পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে তার উচ্চতর পড়ালেখা ও গবেষণাও রয়েছে। চেক-আপ হসপিটাল পরিদর্শনের পাশাপাশি তুলনামূলক স্বাস্থ্যসেবা বুঝার জন্য দিনাজপুরের একটি করে সরকারি হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বেসরকারি ক্লিনিক- ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসি পরিদর্শন করেন। এছাড়া দিনাজপুরের ঐতিহাসিক স্থাপনাসমূহও পরিদর্শন করেন মি. পিটার। এসময় হাসপাতালটি পরিদর্শনে আসেন দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ সুরিনামের প্রোজেক্ট অফিসার আন্না তিশিনা, বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আরমান আকবরী খান এবং কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শহীদুর রহমান রিমন।
সপ্তাহব্যাপী পরিদর্শন শেষে সোমবার একটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন মি. পিটার এবং হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে কিছু প্রস্তবনা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, যেসমস্ত অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে চেক-আপ যাত্রা শুরু করেছে তাতে করে হাসপাতালটির আরো উন্নতি করার সম্ভাবনা রয়েছে। তার দিক-নির্দেশনামূলক পরামর্শ গ্রহণ করতে পারলে চেক-আপ হাসপাতাল ইউরোপিয়ান মানের সেবা দিতে পারবে বলে তিনি মনে করেন। বাংলাদেশের মানুষ যে হারে প্রতিবেশি দেশে চিকিৎসাসেবা নিতে যায়, চেক-আপ অন্তত উত্তরবঙ্গের মানুষকে দিনাজপুরেই তার চেয়েও ভালো মানের সেবা নিতে পারবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস মি. পিটারের।
এসময় চেক-আপ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কীর্ত্তনীয়া ছায়াছন্দ বলেন, আমরা বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে চাই বলেই নেদারল্যান্ডস থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞ মি. পিটারকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসেছি পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য। উত্তরবঙ্গের মানুষকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষকে যেন আর প্রতিবেশি দেশ বা রাজধানীমুখী না হতে হয় সে লক্ষ্যে কাজ করছে চেক-আপ স্পেশালাইজড হাসপাতাল। মি. পিটারের পরামর্শ গ্রহণ করে ইউরোপিয়ান মানের সেবা প্রদানে বদ্ধপরিকর চেকআপ স্পেশালাইজড হসপিটাল।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চেক-আপ হাসপিটালের উদ্যোক্তা প্রমথেশ শীল, পরিচালক সুমন বাড়ই, চিফ অপারেটিং অফিসার মনিরুজ্জামান মনির, কনসালটেন্ট ডা. শাকিবুর রহমান, অ্যাকাউন্ট অফিসার শাজেদুর রহমান, এইচআর ম্যানেজার নূরে আলম সিদ্দিকী, অ্যাডমিন ম্যানেজার শাওন হাজারিকা, মার্কেটিং ম্যানেজার ফজলে এলাহী বাবুসহ ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা।
গত বছরের ১৭ই মার্চ দেশসেরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে যাত্রা শুরু করে চেকআপ মেডিকেল সার্ভিসেস লি.-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ৭৩ শয্যা বিশিষ্ট ‘চেক-আপ স্পেশালাইজড হাসপাতাল’। হাসপাতালটির বিশেষত্বর মধ্যে রয়েছে নয় শয্যা বিশিষ্ট শূন্য থেকে ২৮ দিন বয়সী শিশুর জন্য লাইফ সাপের্ট/ ইনকিউবেটর (এনআইসিইউ)। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নয় শয্যা বিশিষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ লাইফ সাপোর্ট (আইসিইউ) ইউনিট। সাত শয্যা বিশিষ্ট কিডনি ফেইলিয়র রোগির ডায়ালাইসিসের সুবিধা। হৃদরোগের জন্য রয়েছে নিবিঢ় পরিচর্যা কেন্দ্র (সিসিইউ)। অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার পাঁচটি।
চেক-আপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের আরো চিকিৎসাসেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে জেনারেল সার্জারি, ইউরোলজি, অর্থো-সার্জারি, নিউরো-সার্জারি, নবজাতক ও শিশু সার্জারি, ব্যাথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি, কেমো-থেরাপিসহ ক্যান্স্যার বিশেষজ্ঞসেবা। এসব সেবা নিশ্চিত করতে ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স ও ফার্মেসি সুবিধা রয়েছে হাসপাতালের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে।