বীরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হালকা কুয়াশায় শীতের সকালে বিস্তীর্ণ মাঠ ভরা মাচায় শিমের বাগানে রঙিন ফুলে ফুলে কৃষকের স্বপ্ন। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে রঙিন শিমের ফুল। আবার ফুলের মাঝে মাঝে উকিঁ দিচ্ছে সবুজ শিম। পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া অনেকের মনে হবে প্রকৃতির নান্দনিক ফুলের বাগান। দেখে মন জুড়িয়ে যায়, দূর থেকে তাকালেই দেখা যায় শিমের মাচায় সবুজের সঙ্গে দুলছে রঙিন ফুল।
সাদা এবং বেগুনি রঙের মনোমুগ্ধকর ফুলে প্রকৃতি যেন নতুন রূপে সেজেছে। মৌসুম শুরুর আগেই এমন মনোরম দৃশ্যে ভরে উঠেছে উত্তরের জেলা দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শিম ক্ষেতগুলো। এসব ক্ষেতের সৌন্দর্য আবহমান গ্রাম বাংলার এক অন্যরকম দৃশ্যকে তুলে ধরছে। সরজমিনে জানা গেছে, উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের কাজল গ্রামের কৃষক বুলবুল ইসলামের মাচায় ওঠা শিমের সবুজ বাগানে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলে বানিজ্যিকভাবে দিন দিন আগাম শিম চাষে ঝুঁকছেন কৃষক।
এবার শিমের ফলন হয়েছে বাম্পার বলে জানায় কৃষক। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বীরগঞ্জ উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমান ৩২হাজার ৮ শত ৯ হেক্টর। এবার ১ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে শাক-সবজির চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১০ হেক্টর জমিতে আগাম শিমচাষ করছে চাষীরা। বিগত কয়েক বছরে উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে আগাম শীতকালীন সবজি শিম।
শিম চাষী বুলবুল ইসলাম জানান, এবছর দেড় বিঘা জমিতে আগাম শিম চাষ করেছি এতে জমি তৈরি, হালচাষ, রাসায়নিক সার, জৈব সার, কীটনাশক, মাচায় ও শ্রমিকের খরচসহ মোট ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে শিম বাগানে ফলন ভালো হয়েছে। আরও ফুলে ও ফলে ভরপুর। আগাম ভালো দামে শিম বিক্রি করেছি। শুরুর দিকে প্রতি কেজি শিম সপ্তাহ জুড়ে পাইকারি বাজারে ১২০-১৫০টাকা বিক্রি করেছি। কিন্তু বর্তমানে বাজারে পর্যাপ্ত শিম আসায় প্রতি কেজি শিমের দাম ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি করছি। এখন পর্যন্ত ২ লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছি। আরও শিম রয়েছে বিক্রির জন্য।
তিনি আরও বলেন, শিম বাগানে প্রতিনিয়ত কয়েক জন শ্রমিক কাজ করে এবং ২-৩ দিন পর পর ক্ষেত হতে শিম সংগ্রহ করে বাজারজাত করি। ৪-৫দিন পর কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। কারণ মাঝে মধ্যে পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে এবং শিম গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে অধিকাংশ পাতা হলুদ হয়ে হচ্ছে। এরপরেও বাম্পার ফলন হয়েছে এবং দামও ভালো পাচ্ছি।
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: শরিফুল ইসলাম জানান,উপজেলার বিভিন্ন এলাকা শিম চাষের জন্য বেশ সম্ভাবনাময়ী। এটা শীতকালীন সবজি হলেও এখন প্রায় সব মৌসুমেই চাষ হচ্ছে। এ উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে আগাম শিমচাষ করছে চাষীরা। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা শিম চাষে ঝুঁকছে এবং শিম চাষে রোগবালাই,পোকা আক্রমণে রক্ষায় বিভিন্ন ফাদ ব্যবহার এবং ভালো শিম উৎপাদনের জন্য কৃষকদের সব ধরণের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদানে মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিস কাজ করছে।