চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় প্রভাব পড়েছে ঘূর্ণিঝড় দানা’র। ফলে গত দু’দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিসহ বইছে দমকা হাওয়া। বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় অনেক কৃষকের রোপা আমন ধান নুয়ে পড়েছে মাটিতে। ক্ষতির মুখে পড়েছে শীতকালীন আগাম শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্য। এতে অভাবনীয় ক্ষতির শঙ্কায় আছেন কৃষকরা। এই মূর্হুতে বৃষ্টি হওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আগামী দুইদিন রোদ না হলে এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
গতকাল ২৬ অক্টোবর শনিবার সরজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা-পাকা ধানের ক্ষেত মাটিতে নুয়ে পড়েছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, জীবন-জীবিকার জন্য উপজেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। চলতি রোপা আমন মৌসুমে খরায় রোপা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। অধিকাংশ কৃষক বাড়তি খরচে সেচ দিয়ে রোপণ করেছেন এই ধানের চারা। ইতিমধ্যে এই ক্ষেতের ধান বড় হতে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও ধান পাঁকতেও দেখা গেছে। এ অবস্থায় উপজেলায় প্রভাব পড়েছে ঘূর্ণিঝড় দানা’র। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দু’দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিসহ বইছে দমকা হাওয়া। এ কারণে রোপা আমন ক্ষেত নুয়ে পড়েছে মাটিতে। ফলে ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ২৩ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের বিরি-৭৫, ৮৭ ও বিনা-১৭ ইত্যাদি রয়েছে সাড়ে ৪শ’ হেক্টরে।
উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের উত্তর নশরতপুর গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল বলেন, গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও দমকা বাতাসের কারণে আমার ২০ শতক জমির ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে।
উপজেলার নশরতপুর গ্রামের কৃষক স্বপন চন্দ্র রায় বলেন, এ বছর আমি ৩ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছি। প্রথমদিকে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা ছিল। গত দু’দিনের বৈরী আবহাওয়ার কবলে ১ বিঘা জমির ধান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কৃষক গোলাম রব্বানী বলেন, বৃষ্টি ও দমকা বাতাসের কারণে ইতিমধ্যে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আগে প্রতিবিঘা জমিতে যেখানে ২৫-৩০ মণ ধান পাওয়া যেত, সেখানে পড়ে যাওয়া জমিতে মাত্র ৪-৫ মণ ধান আসতে পারে।
উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক বলেন, বৃষ্টি ও দমকা বাতাসের কারণে অনেক জমির কাঁচা-পাকা ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। অনেকেই এসব পড়ে যাওয়া ধানগাছ রক্ষা করতে ঝুঁটি বেঁধে দিচ্ছেন। কেউবা এসব নুয়ে পড়ে যাওয়া ধানগাছ কেটে নিয়ে গিয়ে গরু-ছাগলকে খাওয়াচ্ছেন। তারা আরও বলেন, ঝড়-বৃষ্টিতে ধানসহ রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে।
উপজেলার দক্ষিণ নশরতপুর গ্রামের কৃষক পরেশ চন্দ্র রায় বলেন, আকাশ পরিস্কার থাকায় জমিতে পাকা ধান কেটে শুকানোর জন্য রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ায় এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, ঘূর্ণিঝড় দানা’র কারণে অনেক এলাকায় ধান গাছ নুয়ে মাটিতে পড়ে গেছে। তবে বৃষ্টি না হলে ধানের বেশি ক্ষতি হবে না। এসব গাছ ‘লজিং আপ’ করলে রক্ষা পাবেন কৃষকরা। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যেসব ক্ষেতের ধান পেঁকে গেছে সেসব ধান দ্রুত কাটার জন্যও আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।