-আজহারুল আজাদ জুয়েল- ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে যখন আমি বালুরঘাটে গেলাম, সেটা ছিল ইন্ডিয়ায় আমার ৫ম সফর। আগের সফরগুলোর মূল লক্ষ্য শুধুমাত্র ভ্রমণ হলেও ৫ম সফওে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি যুক্ত জায়গা দর্শন এবং সম্ভব হলে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করাটাও একটা লক্ষ্য ছিল। সেই কারণে ৫ম দফা ভারত সফরকালে আমি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত রাধিকাপুর, ডালিমগাঁও, কালিয়াগঞ্জ, রায়গঞ্জ হাসপাতালসহ আরো অনেক এলাকায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। তবে আজকের এই লেখায় মুক্তিযুদ্ধে হামজাপুরের কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব।
হামজাপুর দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর বøক-এর বাসুরিয়া পঞ্চায়েত ভুক্ত একটি গ্রাম। এর অবস্থান পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট জেলা হেডকোয়ার্টার হতে ৫২ কিলোমিটার এবং গঙ্গারামপুর সাবডিভিশন হেডকোয়ার্টর হতে ১৫ কিলোমিটার দূরে। তবে গঙ্গারামপুর শহর হতে গ্রামটির দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। হামজাপুর গ্রামের ১৮৬ বাড়ির মোট জনসংখ্যা ৭৮১ জন। এর মধ্যে ৪১০ জন পুরুষ, ৩৭১ জন নারী। শিক্ষার হার ৬০ দশমিক ৬৯ ভাগ। তম্মধ্যে পুরুষদের শিক্ষার হার ৬৭ দশমিক ৩২, আর নারী শিক্ষার হার ৫৩ দশমিক ৩৭ ভাগ।
হামজাপুরের নিকটতম গ্রামগুলি হলো কাটাবন, সিংফরকা, নালাফরকা, অনন্তপুর, মল্লিকপুর, মাধবপুর, আবিদপুর, লালচন্দ্রপুর, ব্রাম্মনপাড়া, বিতুর, আরাজী লালচাঁদপুর ইত্যাদি। গ্রামটিতে মোট জমির পরিমাণ ৬৭ দশমিক ৩১ হেক্টর (ভিলেজইনফো.ইন.গঙ্গারামপুর হতে সংগৃহীত তথ্য)।
পুনর্ভবা অবিভক্ত দিনাজপুরের অন্যতম প্রধান নদী। হামজাপুর সীমান্তের যে স্থান দিয়ে গঙ্গারামপুর বøকে প্রবেশ করেছে এই নদী, সেখানেই রয়েছে হামজাপুর ঘাট, তারপর আছে হরিতলা ঘাট, গঙ্গার ঘাট, শিববাড়ি ঘাট সহ বিভিন্ন ঘাট। ইন্ডিয়ার ভিতরে পুনর্ভবা নদী সংলগ্ন এই হামজাপুর গ্রামে ১৯৭১ সালে মুক্তিসেনাদের দূর্ভেদ্য ঘাঁটি এবং মুক্তিযুদ্ধকালিন ৭নং সেক্টরের অন্যতম সাবসেক্টর ছিল। যার নেতৃত্বে ছিলেন দু:স্বাহসী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন ইদ্রিস আলী খান।
২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ইন্ডিয়ায় আমার ৪র্থ সফরকালে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাধীন কুসমন্ডি বøকের মহিপাল গ্রামে গিয়েছিলাম। সেই গ্রামের চৌধুরীপাড়ায় জনৈক ফজলে চৌধুরীর বাড়িতে (তিনি দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স এর সাবেক সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ হুমায়ুন কবীরের ছোট ভাই এবং ঢাকায় কর্মরত বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু সুফিয়ান কবীরের চাচা) অবস্থানকালে তাঁর কাছ থেকেই জেনেছিলাম যে, গঙ্গারামপুর বøকের হামজাপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর আছে। কতজনের কবর আছে তা বলতে পারেননি। তবে বলেছিলেন যে, ১০-১৫ জন হবে। এমন কথা জানার পর তখনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এর পরের বার ইন্ডিয়ায় এলে মুক্তিযোদ্ধাদের সেই কবরগুলো দেখতে যাব।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি ৫ম বারের মত ভারত সফরে গেলাম। শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, মুর্শিদাবাদ, মালদা হয়ে ২১ সেপ্টেম্বর এসে উঠলাম গঙ্গারামপুরের একটি আবাসিক হোটেলে। হোটেলটির অবস্থান গঙ্গারামপুর মোড়ে। এই মোড় হতে যে রাস্তাটি হামজাপুরের দিকে চলে গেছে সেই রাস্তার ডান পাশেই তৃতীয় তলা বিশিষ্ট হোটেলটির অবস্থান। নাম হোটেল ‘স্বস্তিলোক’।
গঙ্গারামপুর মোড় তথা হোটেল স্বস্তিলোক হতে হামজাপুরের দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে হামজাপুরের উদ্দেশে একটি টোটো গাড়ি (ব্যাটারী চালিত গাড়ি। বাংলাদেশের দিনাজপুরে এই গাড়িগুলো অটো গাড়ি হিসেবে পরিচিত) যোগে রওনা দিলাম। আকাশ পুরোপুরি মেঘলা ছিল। টিপটিপ বৃষ্টিও হচ্ছিল। তবে আগের দিনের তুলনায় একেবারেই কম। আগের দিন অর্থাৎ ২১ সেপ্টেম্বর প্রায় সারাদিনে কয়েক দফায় ঝিরঝিরে বৃষ্টি, আর রাতে মুসলধারে বৃষ্টি হয়েছিল।
গঙ্গারামপুর হতে হামজাপুর যাওয়ার পথে দেড় কিলোমিটার যেতে না যেতেই প্রাচীন বানগড় পাওয়া গেল। অনেক আগেই শুনেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের সময় বানগড়েও মুক্তিবাহিনী ও শরনার্থীদের অবস্থান ছিল। তাই ভাবলাম, এখানে নেমে দেখি কারো কাছ থেকে কোন কিছু জানতে পারি কি না। দুই-তিনজনকে পেয়েও গেলাম, যারা স্থানীয় অধিবাসী এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন।
পাউলুস কিসকু (৭০), পিতা- সরান কিসকু। আদিবাসী এবং খৃষ্টান। বাসস্থান বানগড়ের রাজীবপুর মিশন এরিয়ায়। তিনি জানালেন যে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মিশন এলাকা সহ হামজাপুর পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে ভারতীয় সৈন্যরা ১৮টি ট্যাংক মোতায়েন করেছিল। ট্যাংকগুলো পরে একসাথে জয়বাংলার (বাংলাদেশের) দিকে মার্চ করেছিল এবং পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে অপারেশন চালিয়েছিল।
পুর্ণ কর্মকার (৬৯), পিতা- দিনেশ কর্মকার হলেন বানগড়ের নিকটবর্তী শিববাড়ি কলোনীর অধিবাসী । তিনি জানালেন যে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে মোকাবেলায় ভারতীয় সেনাদের জন্য বিভিন্ন স্থানে বাংকার খোঁড়া হয়েছিল। পুর্ণ কর্মকার নিজেও শিবপুর এলাকায় বাংকার খুঁড়েছিলেন। একই এলাকার রতন সিং জানালেন একই কথা। ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীর জন্য তিনিও বাংকার খঁড়েছেন। অত:পর উল্লেখিত তিনজনসহ আরো কয়েকজনের সাথে আলাপ করে জানা গেল যে, বানগড় হতে হামজাপুর পর্যন্ত এবং এর আশেপাশের এলাকা জুড়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নানান স্মৃতি জড়িয়ে আছে। পুরো এলাকা জুড়ে অসংখ্য বাংকার, সেনা ছাউনি, মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রটিং ক্যাম্প, শরনার্থীদের আশ্রয় শিবিরসহ নানান কিছু।
দক্ষিণ মাহুর কিসমতপুর হলো গঙ্গারামপুরের ৭ নং জাহাঙ্গীরপুর পঞ্চায়েতের একটি গ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দা রতন সরকার (৭২), পিতা-মহিম চন্দ্র সরকার জানালেন যে, তাঁর বিয়ে হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়। কেন? যুদ্ধের বিয়ে সময় কেন? প্রশ্নের উত্তওে তিনি জানালেন যে, তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের চিরিরবন্দরে ছিল। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তিনি। পাকিস্তানি সেনাদের হামলার কারণে তাঁরা গঙ্গারামপুরে পালিয়ে আসেন। এখানে আসার পর যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে, তাঁর বাবা-মা বলেন যে, কখন কি হয়, না হয়। তাই তাঁরা আমার বিয়ে দিবেন। এরপর রতনের বিয়ে হয় এখানকারই এক মেয়ের সাথে। তারপর থেকে এখানেই আছেন। তাঁর তথ্যনুযায়ী বানগড়েই মুক্তিসেনাদের সবচেয়ে বড় ক্যাম্প ছিল। দক্ষিণ মাহুর কিসমত এলাকাতেও বেশ বড় ক্যাম্প ছিল
মুক্তিযোদ্ধাদের। সেখানে ভারতীয় সেনারা ট্যাংক বসিয়েছিলেন। কাচারীপুকুর নামক স্থানেও ট্যাংক বসানো হয়েছিল। উত্তর মাহুর কিসমত ও রামদেবপুরেও ক্যাম্প ছিল মুক্তিবাহিনীর। বানগড় হতে মুক্তিসেনারা প্রায়ই জয় বাংলায় অপারেশনে যেত, জানালেন রতন সরকার।
বানগড়ে ভারতীয় সেনাদেরও ক্যাম্প খোলা হয়েছিল। তাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন। বানগড়ের পর শিববাড়ি। সেখানে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে আগ্রহী যুবকদের রিক্রটিং ক্যাম্প খোলা হয়েছিল। এই ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন দিনাজপুরের প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা মি. জর্জ দাস। গঙ্গারামপুর হতে শিববাড়ি পর্যন্ত বাঁশের পিলার বসিয়ে বিদ্যুৎ আনা হয়েছিল শিববাড়ি ক্যাম্পে। এমন তথ্য দিলেন শিববাড়ির পুর্ণ কর্মকার। শিববাড়ি ক্যাম্প হতে এক কিলোমিটার দূরে রাজীবপুর সেন্ট যোসেফ হাইস্কুল। সেখানে ক্যাম্প ছিল মুক্তি সেনাদের। স্কুলের পাশে একটি কবরস্থান আছে। সেই কবরস্থানের ধারেও মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প ছিল। রাজীবপুর গার্লস হাইস্কুলের ভিতরে একই সাথে শরনার্থী ও মুক্তিবাহিনীর অবস্থান ছিল বলে জানালেন রতন।
হামজাপুরের আশরাফ আলীর (মাঝে) সাথে এই নিবন্ধের লেখক আজহারুল আজাদ জুয়েল (বামে) ও মহিপাল নিবাসী ফজলে চৌধুরী (ডানে) শিববাড়ির আশেপাশের এলাকা হলো যেমন কেশবপুর, রতনমালা, তালদিঘী, দক্ষিণ মাহুর কিসমত, উত্তর মাহুর কিসমত, রামদেবপুর, রাজীবপুর মিশনপাড়া, সুখদেবপুর, পাটন, ঠেঙ্গাপাড়া, বাউল, দহপাড়া ইত্যাদি। এইসব এলাকার সবখানেই বাংলাদেশ হতে আসা শরনার্থীদের অবস্থান ছিল। তবে শরনার্থীদের প্রধান ঘাঁটি ছিল ঠেঙ্গাপাড়ায় । সুখদেবপুরে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি। আর হিলি লাইনের প্রানসাগর, যাচি, ফুলবাড়ি, রামপুর, এগুলোতেও শরনার্থী ক্যাম্প ছিল।
শুধু ক্যাম্পেই শরনার্থীরা আশ্রয় নিয়েছিলেন, এমন নয়। ক্যাম্পের বাইরে অনেকের বাড়ি-ঘরেও শরনার্থীরা আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। কেশবপুরের বাদল সরকার (৬২), পিতা- মোহনলাল সরকার জানালেন, তাঁর বাড়িতে ৫-৬ ঘর শরনার্থী থাকতেন। তারা তাঁর বাড়িতে থেকেই রেশন পেতেন। উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গের সকলেই একটি তথ্য জানালেন যে, যুদ্ধকালে শরনার্থীদের সবার পরিচিতি ছিল ‘জয় বাংলার’ মানুষ হিসেবে। সেটা শুধুমাত্র এই এলাকায় নয়, পশ্চিমবঙ্গের সবখানেই বাংলাদেশ হতে পালিয়ে আসা শরনার্থীদের ‘জয় বাংলার মানুষ’ বলা হতো।
এবার আসি হামজাপুরের কথায়। বানগড় হতে হামজাপুর প্রায় ১১ কিলোমিটারের দূরত্ব। এই রাস্তা যেতে যেতে দুপুর হয়ে গেল। এর কারণ আরো দু-এক জায়গায় নেমে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি হচ্ছিল। সেই বৃষ্টির মধ্যে যখন হামজাপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থানের দিকে পৌঁছালাম তখন দুপুর প্রায় দেড়টা। পুনর্ভবা নদীর পশ্চিম দিকে কবরস্থান। আমি যখন নদীতীরে পৌঁচেছি, তখন নৌকাযোগে নদীর ওপার হতে এপারে এলেন মহিপালের ফজলে চৌধুরী। হামজাপুরে আসার আগে তাঁকে মোবাইলে জানিয়েছিলাম যে, আমি হামজাপুরে যাচ্ছি। তাঁকে জানানোর কারণ হলো, তিনি আমাকে বলে রেখেছিলেন, আমি যদি হামজাপুরে কখনো যাই, তাহলে তাঁকে যেন বলি। কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর থাকার কথা তাঁর জানা থাকলেও তিনি সেগুলো দেখেন নাই। কিন্তু দেখার ইচ্ছে আছে।
হামজাপুরে গিয়ে পরিচয় হলো সেখানকার স্থায়ী অধিবাসী আশরাফ আলী মিয়া (৬৬), পিতা- মৃত মনিরউদ্দীন মিয়া, সাং- হামজাপুর, বøক-গঙ্গারামপুর এর সাথে। তিনি ফজলে চৌধুরীকে চেনেন, আবার ফজলে চৌধুরীও তাঁকে চেনেন। তাঁর কাছে আমার পরিচয় তুলে ধরলেন ফজলে চৌধুরী। আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, সাংবাদিকতা করি, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখি করি, আমার লেখা অনেক বই আছে, এইসব কথা ফজলে চৌধুরী তাঁকে জানালেন, সেই সাথে হামজাপুরে আমার আসার কারণও তুলে ধরলেন। আশরাফ আলী মিয়া পরিচয় পেয়ে খুব খুশি হলেন। তিনি বললেন, এমন মানুষই খুঁজছিলাম, যারা লেখালেখি করে।
ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছিল। সেই বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিলাম অনেকটাই। আশরাফ আলী মিয়া প্রথমে তাঁর বাসায় আমাদেরকে নিয়ে গেলেন। চা-নাস্তা খাওয়ানোর সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের নানান গল্প বলতে থাকলেন। তিনি জানালেন যে, তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের একজন সহযোগি ছিলেন। গোলাবারুদ বহন করে কামদেবপুরের কাছে চান্দামারি নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্যনুযায়ী হামজাপুরের সিরাজ, জব্বারসহ আরো অনেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে গোলাবারুদ বয়ে নিয়ে গেছেন। দিনাজপুর শহরের মকবুল মোক্তারের ছেলে গীটার ও রানা (বাহাদুরবাজারে লোহার দোকান ছিল) মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন এবং গোলাবারুদ বহন করেছেন, জানালেন আশরাফ মিয়া। তিনি আরো জানালেন যে, হামজাপুরের ভিতরে ‘ধোয়াপুকুর’ নামের একটি পুকুর আছে। সেই পুকুরের ধারে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যম্প ছিল। সেখানে আর্টিলারিও বসানো হয়েছিল। ধোয়াপুকুরের সেনারা পাকিস্তানি সেনাদেও বিরুদ্ধে অপারেশন চালাতে গিয়ে এমন সাহস দেখিয়েছিলেন যে, সরকার তাদের গ্রæপকে টাইগার হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তাই তাদের নাম হয়েছিল ‘টাইগার কোম্পানী।’
ভারতীয় নাগরিক হামজাপুর নিবাসী আশরাফ আলী তাঁর বাড়িটি পুরো ঘুরিয়ে দেখালেন। তারপর বললেন, আমাদের বাড়ির অবস্থান হামজাপুরের মূল এলাকায়। আমার বাড়িতেই মুক্তি বাহিনীর কমান্ডার ইদ্রিস মিয়া থাকতেন। আমার বাড়ির পাশে জর্জিস মিয়ার বাড়ি। ঐ বাড়ির বৈঠকখানায় মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ থাকত। মুক্তিসেনারাও থাকতেন জর্জিস মিয়ার খোলানে।
সীমান্ত এলাকা হামজাপুর। হামজাপুরের সাইড দিয়ে পুনর্ভবা নদী বয়ে গেছে। নদীর উপর নান্দনিক সেতু রয়েছে বিএসএফ এর নিয়ন্ত্রণে। হামজাপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং হতো। ট্রেনিং চলত নদীর বালুচড়ে। ট্রেনিং ক্যাম্পে কোন ঘেরাবেড়া ছিল না। খোলা আকাশের নীচে ফাঁকা বালুচড়ে ট্রেনিং চলত। হামজাপুরে শরনার্থী শিবির ছিল না। কিন্তু প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই প্রচুর শরনার্থী থাকতেন। আর শরনার্থী শিবির ছিল তেঁতুলতলা ও ১০ কিলোমিটার দূরের প্রাণসাগরে। আশরাফ মিয়ার ভাষ্যনুযায়ী, তাঁর নিজের বাড়ি হতে শুরু করে পাশের বাগানবাড়ি থেকে খোলান দিয়ে জর্জিস মিয়ার বৈঠকখানা হয়ে আশেপাশের পুরো এলাকা জুড়ে মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ছিল। সেনাদের সংখ্যা হবে দুই হতে তিন হাজারের মত। আলাদাভাবে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। হামজাপুরের পুরো এলাকা জুড়ে অনেকগুলো বাংকার করা হয়েছিল। ট্যাংক ও সাঁজোয়াগাড়ি মোতায়েন করা হয়েছিল। যুদ্ধের শেষ ১৮টি ট্যাংক নদীর পূর্ব ধার দিয়ে মোতায়েন করা হয়েছিল। ট্যাংকগুলো একসাথে এসে, একসাথে ম্যুভ করেছে। ট্যাংকগুলো ম্যুভ করার সময় সামনের দিকে একটি হেলিকপ্টার ছিল। হেলিকপ্টার থেকে সিগনাল দিলে ট্যাংকগুলো ম্যুভ করত।
আশরাফ মিয়ার ভাষ্যনুযায়ী তিনি ও তাঁর বন্ধুরা ভারতীয় সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বেশ কিছু বাংকার খুঁড়ে দিয়েছিলেন। তিনি যদিও ভারতীয় নাগরিক ছিলেন কিন্তু জয়বাংলার (বাংলাদেশ) মানুষের জন্য প্রাণের টান অনুভব করতেন। তাই জয়বাংলার পক্ষে কাজ করেছেন ভীষণ আন্তরিকতার সাথে। সেই সময় বয়স কম ছিল, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কাজ করতে খুব ভাল লাগত তাঁর।
হামজাপুরে যে নদী আছে, পুনর্ভবা নদী। এই নদীর পূর্ব ধার হলো ইন্ডিয়া, পশ্চিম ধার বাংলাদেশ। নদীর বালুচড়ে মুক্তি বাহিনীর ট্রেনিং চলত। শক্তিশালি অবস্থান ছিল মুক্তিসেনাদের। মুক্তি বাহিনীর অবস্থান ধ্বংস করতে পাকিস্তানি সেনারা হামজাপুরে বোমা ফেলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের চেস্টা ব্যর্থ হয় ভুল নিশানার কারণে। তাদের একটি বোমা পড়েছিল হামজাপুরের পাশের সক্রিয়পাড়ায়। কিন্তু সেখানে মুক্তি বাহিনী কিংবা ভারতীয় বাহিনী থাকত না। আসলে পাকিস্তানি সেনারা বুঝতেই পারত না যে, মুক্তিযোদ্ধারা ঠিক কোন জায়গায় অবস্থান করছে। তাই তারা যতবার বোমা মেরেছিল, তা ভুল জায়গায় পড়েছিল।
হামজাপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর রয়েছে দুইটি স্থানে। আল্লামিয়া কবরস্থান ও বৈরবাড়ি কবরস্থান। আল্লামিয়া কবরস্থান আশরাফ মিয়ার বাড়ির কাছে। তাই আমাদেরকে প্রথমে সেই কবরস্থানে নিয়ে গেলেন তিনি। কবরস্থানটি জঙ্গলে ঢাকা। ঘণ জঙ্গলের ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে অল্প উচ্চতার পাকা প্রাচীর দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু জঙ্গল ভেদ করে কবরের কাছে যাওয়া যাচ্ছিল না। কবরস্থানের এক পাশে একটি পুকুর আছে। জনৈক জসিরউদ্দীন পুকুরটির মালিক। সেই পুকুরের কিনার ধরে অনেক কষ্টে (মাটি ভেজা, পিচ্ছিল ও কাঁটাযুক্ত গুল্ম দ্বারা ভরাট থাকায় পা ফেলা যাচ্ছিল না) মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের পাশে যেতে সমর্থ হই এবং ছবি তুলে নেই। আল্লামিয়া কবরস্থানে ৫ জন শহিদ মুক্তিযোদ্ধার কবর আছে। কবরগুলো চতুর্দিকে প্রাচীর বেষ্টনী দ্বারা ঘিরে দেয়া হয়েছে। প্রাচীর গাত্রে লেখা রয়েছে ‘ খোদা হাফেজ, শহিদ স্মৃতি সৌধ, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন।’ এই বাক্যগুলোর পর শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লেখা হয়েছে। শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম যথাক্রমে ১. মুক্তিফৌজ লতিফ ২. মুক্তিফৌজ ছাত্তার, ৩. মুক্তিফৌজ আ: লতিফ, ৪. মুক্তিফৌজ মোহাম্মদ রফিক ও ৫. মুক্তিফৌজ আ: ইসলাম। এরপর রয়েছে কবর বাঁধাইদাতার ‘নির্দেশক’ হিসেবে ক্যাপ্টেন ইদ্রিস, লে. আমিনুল ইসলাম ও রেজাউর রহমানের নাম এবং ‘কর্মী’ হিসেবে আছে এম হক পোহানী, এম ডি অছিরউদ্দীন ও রহমান এর নাম।
আল্লামিয়া কবরস্থানের পর আমরা বৈরবাড়ি কবরস্থানে যাই। এটি আল্লামিয়া কবরস্থান হতে প্রায় দুইশ মিটারের চেয়ে একটু বেশি দূরে পুনর্ভবা নদী সংলগ্ন কবরস্থান। হামজাপুরের শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের সবচেয়ে বেশি ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধার কবর আছে এখানে। কবরগুলোর চতুর্দিকে প্রাচীর বেষ্টনী দেয়া হয়েছে। কিন্তু পুরো কবরস্থানটি জঙ্গলে ঢাকা পড়েছে এমনভাবে, বাইরে থেকে ফাঁক-ফোঁকর গলিয়ে কিছুতেই কবরগুলোর কাছে যেতে পারলাম না। আশরাফ মিয়া একটি বড় হাঁসুয়া এনে জঙ্গল কাটার চেষ্টা করলেন, সফল হলেন না। বৃষ্টি হচ্ছিল। আবার নামাজের সময় হয়ে এসেছিল। শুক্রবার দিন। আশরাফ মিয়া, ফজলে চাচা সবাই নামাজ পড়বেন। ফলে একটা অস্থিরতা।
আশরাফ আলী জানালেন যে, বৈরবাড়ি কবরস্থানে দুই সারিতে ৮ জন করে মোট ১৬ জন শহিদ মুক্তিযোদ্ধার কবর আছে। চতুর্দিকে দেয়াল তুলে দিয়ে কবরগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে। তিনি কবরে শায়িত ১০-১২ জন শহিদের নাম বলতে পারলেন। বাকি নাম পরবর্তীতে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট প্রকাশিত এবং মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ-৭, ট্রাস্ট গ্রন্থ-১৯৪, প্রকাশকাল- মার্চ ২০২৩ জার্ণালে পুনম মুখার্জীর লেখা ‘পশ্চিম দিনাজপুরে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিবরণ’ প্রবন্ধ হতে সংগ্রহ করেছি। এখানে এই বিষয়টি উল্লেখ করতে চাই যে, আশরাফ মিয়া গল্পে গল্পে তাঁর বাসায় একজন অধ্যাপকের আসার কথা বলেছিলেন যার নাম পুনম। তিনি কবরগুলোর ছবি ও নাম লিখে নিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছিলেন।
গঙ্গারামপুরের হামজাপুরের হামজাপুরে পুনর্ভবা নদী।
যাই হোক, এবার বৈরবাড়ি কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলি। এই মুক্তিযোদ্ধারা হলেন; ১. নায়েক ফজলু হক, ২. সেপাই আমিরুল ইসলাম, ৩. সেপাই রমজান আলী, ৪. মুক্তিফৌজ আব্দুল জব্বার, ৫. মুক্তিফৌজ সফিউদ্দীন, ৬. মুক্তিফৌজ জয়নাল আবেদীন, ৭. মুক্তিফৌজ আনোয়ার হোসেন, ৮. লে. নায়েক মোকাররম আলী, ৯. মুক্তিফৌজ মমতাজ আলী, ১০. মুক্তিফৌজ আব্দুল কাসেম, ১১. মুক্তিফৌজ ফজলুল রহমান, ১২. মুক্তিফৌজ এম এ রশিদ, ১৩. মুক্তিফৌজ রইসউদ্দীন, ১৪. মুক্তিফৌজ আব্দুল আজিজ, ১৫. মুক্তিফৌজ দেলোয়ার হোসেন ও ১৬. মুক্তিফৌজ আবু। উভয় তালিকা হতে লতিফ ও ফজলু নামের ২জন করে মুক্তিযোদ্ধার নাম পাওয়া যায়। কিন্তু শহিদদের ঠিকানা উল্লেখ না থাকায় তাঁরা কে কোথাকার, এতগুলো বছর পর তার হদিস পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশরাফ আলী মিয়ার তথ্যানুযায়ী উল্লেখিত ২১ জন (৫+১৬) মুক্তিযোদ্ধারা একই দিনে নয়, আলাদা আলাদা দিনে আলাদা আলাদা ঘটনায় মারা গেছেন। বেকাহার, খানপুর, জামালপুর, রামসাগর এলাকায় যুদ্ধ করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন সময়ে মারা যান। তাদের কবর দেয়া হয়েছে পৃথকভাবে। স্বাধীনতার পর কবরগুলো ঘিরে নিয়ে প্রাচীর দেয়া হয়েছে। সবাই আলাদা আলাদা ঘটনায় মারা গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে ও শেষের দিকে দিনাজপুরের সীমান্ত এলাকা লালমাটিয়া, চকেরহাট, বেকাহার, জামালপুর, খানপুর, রামসাগর, যুদ্ধে ও অন্যান্য যুদ্ধ মারা যাওয়ার ঘটনা বেশি।
শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রথম মারা যান ফজলুল রহমান। তিনি দিনাজপুরের (বাংলাদেশ অংশে) লালমাটিয়া নামক স্থানে খান সেনাদের বাংকারে ঢুকে কয়েকজন খান সেনাকে হত্যা করেছিলেন। এসময় অন্য খান সেনার এলএমজির গুলি তার তলপেটে বিদ্ধ হয় ও ঘটনাস্থালেই মারা যান।
মমতাজ আলীর মাথায় ও চোখে গুলি লেগেছিল বেকাহার এলাকায়। সফিউদ্দীনের বাড়ি ঘুঘুডাঙ্গায়। তিনিও বেকাহারে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। আনোয়ার হোসেনকে বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁকে উদ্ধার করে হামজাপুর আনা হয়েছিল। কিন্তু রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না। উন্নত চিকিৎসার জন্য হামজাপুর হতে শিববাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি রক্তক্ষরণে মারা যান। ফজলু হক মারা যান গলায় শেলের টুকরা লেগে। অন্য যারা মারা গেছেন, তারাও কোথাও না কোথাও যুদ্ধ করতে গিয়েই মারা গেছেন। শহিদদের একজনের মৃত্যু মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ভুলভাবে হয়েছে বলে জানান আশরাফ আলী।
২১ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যেকের জানাজা ও দাফন হয়েছে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী। জানাজায় মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি হামজাপুরের স্থানীয় বাসিন্দারাও অংশ নিয়েছেন। জানাজায় অংশ গ্রহনকারি হামজাপুরবাসীর উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন আশরাফ আলী মিয়া, আবু রায়হান, সিরাজউদ্দীন, হাফিজউদ্দীন, হামিদার রহমান, জর্জিস মিয়া, শরিফউদ্দীন, আব্দুল জব্বার, আতাবউদ্দীন, আজিজার রহমান খান প্রমুখ। অধিকাংশ লাশের জানাজা পড়িয়েছেন হামিদার খান নামের একজন মৌলভী। তিনি হামজাপুর মসজিদের ইমাম ছিলেন। এছাড়া একজন মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসক, যার বাড়ি ছিল কুমিল্লায়, তিনিও কয়েকজনের জানাজা পড়িয়েছেন। তাঁর নাম জানা যায় নাই।
হামজাপুরের অধিবাসীদের সাথে মুক্তিযোদ্ধা ও শরনার্থীদের একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে। মুক্তিযোদ্ধা ও শরনার্থীরা দেশে ফেরার সময় এপার-ওপার দুই পারের মানুষের মধ্যে একটা আবেগ তৈরী হয়েছিল। একটা কান্নার রোল পড়ে গিয়েছিল সেখানে। ৯ মাস একসাথে অবস্থানের কারণে যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তা আজও ভুলতে পারেনি সেখানকার মানুষ।
বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পুরোটাই একটি সীমান্ত জেলা। এই জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ৯ উপজেলা যথাক্রমে ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর, বিরামপুর, ফুলবাড়ি, পার্বতীপুর, চিরিরবন্দর, সদর, বিরল, বোচাগঞ্জ এর সাথে ভারতীয় সীমান্ত রয়েছে। বাংলাদেশের ভিতরে দিনাজপুর সদর উপজেলার বনতাড়া হতে বিরল উপজেলার বিজোড়া পর্যন্ত সীমান্ত এলাকাটি সাধারন ভাবে দক্ষিণ কোতয়ালী নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে ইন্ডিয়ার ভিতরের সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল। কাটলা ক্যাম্প, আঙ্গিনাবাদ সাব সেক্টর ক্যাম্প, প্রানসাগর ক্যাম্প, হামজাপুর সাবসেক্টর ক্যাম্প, শিববাড়ি ক্যাম্পসহ আরো অনেক ক্যাম্প। কাটলা ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন আ ল ম ফজলুর রহমান, আঙ্গিনাবাদ সাব সেক্টরের দায়িত্বে ইন্ডিয়ান আর্মি ক্যাপ্টেন ছলোয়ান সিংবাদ, শিববাড়ি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ইপিআর মি. জর্জ দাস। তবে হামজাপুর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ভিন্ন এক আবেগের জায়গা নিয়ে আছে, কারণ সেখানে ২১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। -আজহারুল আজাদ জুয়েল, সাংবাদিক, কলামিস্ট, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক