বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতের জন্য ব্যবসায় কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে সেই ধারণা পাওয়া যাবে পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (পিএমআই) বা ক্রয় ব্যবস্থাপনা সূচকের মাধ্যমে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বেসরকারি উদ্যোগে চালু হচ্ছে এই সূচক। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স (এমসিসিআই) এবং গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ (পিইবি) যৌথভাবে এখন থেকে এ সূচক বা টুল প্রকাশ করবে। এ সূচক তৈরিতে সহায়তা করবে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও)।
সোমবার রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআই কার্যালয়ে বাংলাদেশে পিএমআই চালু করা উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন পিইবির চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ। এ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিইবির অর্থনীতিবিদ ও সিনিয়র ম্যানেজার হাসনাত আলম। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল ও এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সূচকটির বিষয়ে জানানো হয়, প্রতি মাসে এ সূচক তৈরি করা হবে। অতীতের তথ্য-উপাত্ত নয়, বর্তমান তথ্য-উপাত্তকে পর্যালোচনা করে তৈরি করা হবে এ সূচক। যেখানে নতুন ক্রয়াদেশ, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, সরবরাহ এবং ইনভেন্টরির মতো বিভিন্ন বিষয় সংযুক্ত থাকবে, যা ব্যবসা বা অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য খাতভিত্তিক বিস্তারিত পরিকল্পনা নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে কৃষি, উৎপাদন, সেবা ও নির্মাণ খাতের সূচক প্রকাশ করা হবে। মোদ্দা কথা, এটি একটি ব্যারোমিটার যা দেশের অর্থনীতির ভালো-মন্দ দিক নির্দেশ করে।
সূচকটির বিস্তারিত তুল ধরে মাশরুর রিয়াজ জানান, পিএমআই ধারণাটি বিশ্বের অন্যান্য দেশে পুরোনো হলেও বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ নতুন। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৪৯ সালে এটি চালু হয়। এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে এ সূচক ব্যবহার করা হয়। মূলত গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাতের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত ও মোকাবেলা করে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণে এটি ব্যবহার হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ সূচকের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন খাতের নীতি নির্ধারকরা খুব সহজে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বুঝে বিনিয়োগ করতে পারবেন। পাশাপাশি সরকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট, বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী, বিশ্লেষক ও নীতিনির্ধারকরা পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই টুল ব্যবহার করতে পারবেন।
তিনি মনে করেন ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এ টুল খুব কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে প্রতি মাসের অর্থনৈতিক পরিবেশ বোঝা যাবে। প্রতি মাসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তারে ব্যবসার পরিস্থিতি বিষয়ে সর্বোচ্চ ১০ দিনের তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
ম্যাট ক্যানেল বলেন, অনেক আগে থেকেই পিএমআই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হয়ে আসছে। বাংলাদেশে নতুন হলেও অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করার জন্য এটি খুব জরুরি। এলডিসি থেকে কীভাবে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া যায় সেই বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করবে এ সূচকটি।
পরিবর্তনশীল বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বা সংযুক্ত থাকতে পিএমআই অবশ্যই প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, রিয়েল টাইম ডাটা অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতির পরবর্তী ধাপে কীভাবে পৌঁছাতে হবে সেটি জানা জরুরি। এ টুল ব্যবহার করে ব্যবসার পরবর্তী ধাপে সহজে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
মূল প্রবন্ধে হাসনাত আলম বলেন, বাংলাদেশে এটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে শুরু হয়েছে। গত নভেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়। আগামী মার্চ নাগাদ প্রথম প্রতিবেদনটি প্রকাশ করার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি সম্পূর্ণ নতুন ধারণা। ফলে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের তথ্য প্রকাশ করতে চাইবে না। তবে সূচক তৈরির জন্য যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হবে সেগুলো কোনো কোম্পানির জন্য নেতিবাচক হবে না। বরং তাদের সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখবে।
এমসিসিআইর সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, ব্রিটিশ সরকারের এই সহযোগিতা দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশের বোঝাপড়া, বিশ্লেষণ করা এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে নির্দেশক হিসাবে কাজ করবে। পিএমআই বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, বাংলাদেশের প্রধান শিল্পখাতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।