জেলার সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ও হৈবতপুর ইউনিয়নে মাঠে বিষমুক্ত শীতকালীন সবজি বাঁধাকপি চাষ করে অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলে গেছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজারেও এসব বাঁধাকপি ছড়িয়ে পড়ায় প্রতি মৌসুমেই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। উপযুক্ত মূল্য পেয়ে দারুণ খুশি তারা।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, দেশের সবজির একটি বড় অংশ উৎপাদিত হয় যশোর জেলায়। গ্রীষ্মকালিন, আগাম শীতকালীন ও শীতকালীন এই তিন ভাগে বছরজুড়ে (১২ মাস) সবজির চাষ করেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে জেলায় ১৯ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৩০০ হেক্টর। শুধুমাত্র হৈবতপুর ইউনিয়নে ২১০ হেক্টর, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নে ১৬৫ হেক্টর জমিতে বাঁধা কপির চাষ হয়েছে।
সূত্র জানায়, চুড়ামনকাটি ও হৈবতপুর ইউনিয়নে উৎপাদিত বাঁধাকপির যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন ও সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া, বিদেশে বাঁধাকপি রফতানির কাজে কৃষকদের সাহায্য করছে। কৃষকদের সুবিধার্থে চুড়মনকাটির আব্দুলপুর ও হৈবতপুরের শাহাবাজপুরে সবজি প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র স্থাপন করেছে। সেখানে বাঁধাকপি প্যাকেটজাত করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া তাইওয়ানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারে পাঠানো হচ্ছে।
সূত্রটি আরো জানায়, ২০১৮ সাল থেকে যশোরে বাঁধাকপি রপ্তানি শুরু হয়। সেবার ১৮৮ মেট্রিক টন বাঁধাকপি রপ্তানি করা হয়। এরপর ২০১৯ সালে ৩৩০ মেট্রিক টন, ২০২০ সালে ৪২৫ মেট্রিক টন, ২০২১ সালে ৫৯০.৭২৪ মেট্রিক টন, ২০২২ সালে ৫৭০ মেট্রিক টন ও ২০২৩ সালে ৬১০,৩৪২ মেট্রিক টন বাঁধাকপি রপ্তানি করা হয়।
চুড়ামনকাটি ও হৈবতপুর ইউনিয়নের সবজি চাষি শফিয়ার রহমান ও শান্তি মন্ডল জানান, চলতি মৌসুমে বাঁধাকপির বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজার মূল্য বেশি থাকায় তারা লাভবান হচ্ছেন। পোলতাডাঙ্গা গ্রামের আমিন উদ্দিন জানান, তিনি বারো মাস বিভিন্ন সবজির চাষ করেন। তবে বেশির ভাগ জমিতে আবাদ করে থাকেন বাঁধাকপির। এবারও দেড় বিঘা জমিতে শীতকালীন বাঁধা কপির চাষ করেছেন।
যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানান, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর, পোলতাডাঙ্গা, বাগডাঙ্গা ও চুড়ামনকাটির উত্তরপাড়া, হৈবতপুর ইউনিয়নের হৈবতপুর, শাহবাজপুরের মাঠে সবচেয়ে বেশি বাঁধা কপির চাষ হয়। এখানকার অধিকাংশ চাষি বিদেশে কপি রপ্তানি করে লাভবান হচ্ছেন। ফলে বাঁধা কপি চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, যশোরকে সবজির রাজ্য বলা হয়ে থাকে। এখানকার সবজির মান উন্নত। বিশ্বের বাজার দখলে করে নিয়েছে যশোরের বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন সবজি। বিষমুক্ত সবজি চাষে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেয়া হয় বলে উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।